গৌড়

প্রাচীন শহর


গৌড় বাংলার এককালীন রাজধানী এবং অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি নগর যার অবস্থান বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এটি লক্ষণাবতী বা লখনৌতি[১] নামেও পরিচিত। প্রাচীন এই দুর্গনগরীর অধিকাংশ পড়েছে বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা জেলায় এবং কিছু অংশ পড়েছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। শহরটির অবস্থান ছিল গঙ্গানদীর পূর্ব পাড়ে, রাজমহল থেকে ৪০ কি:মি: ভাটিতে এবং মালদার ১২ কি:মি: দক্ষিণে। তবে গঙ্গানদীর বর্তমান প্রবাহ গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে অনেক দূরে।

গৌড়
গৌড়, লখনৌতি, লক্ষণাবতী
Entry gate at Gaur, Malda..jpg
গৌড়ের ঐতিহাসিক প্রবেশদ্বার, লুকোচুরি দরওয়াজা
গৌড় পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
গৌড়
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান
বিকল্প নামলখনৌতি, লক্ষণাবতী
অবস্থানমালদা, পশ্চিমবঙ্গ,  ভারতচাঁপাইনবাবগঞ্জ,রাজশাহী বিভাগ,  বাংলাদেশ
ধরনপ্রাচীন নগর
দৈর্ঘ্য৭ ১/৮ কিমি
প্রস্থ১ – ২ কিমি
এলাকা২০ - ৩০ কিমি2
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠিত১৫ শতক (এর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত নয়)
পরিত্যক্ত১৬ শতক
যে ধারাবাহিকের অংশ সেটি হল
Atisha.jpg
প্রাচীন বাংলা
ধ্রুপদী বাংলা
মধ্যযুগীয় বাংলা
আধুনিক বাংলা
এছাড়াও দেখুন

ইতিহাস

সেন শাসনামলে লক্ষনাবতী বা লখনাউতি উন্নতি লাভ করে।লক্ষনাবতী নগরের নামকরণ করা হয়েছে সেন রাজা লক্ষ্মণ সেন - এর নামানুসারে। সেন সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের আগে গৌড় অঞ্চলটি পাল সাম্রাজ্যের অধীনের ছিল এবং সম্ভবতঃ রাজা শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল এর প্রশাসনিক কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ শহর থেকে দশ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় ও পান্ডুয়া (প্রাচীন নাম গৌড়নগর ও পান্ডুনগর )।[২] অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ যুগে পাল বংশের রাজাদের সময় থেকে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ১১৯৮ সালে মুসলমান শাসকেরা গৌড় অধিকার করবার পরেও গৌড়েই বাংলার রাজধানী থেকে যায়। ১৩৫০ থেকে রাজধানী কিছুদিনের জন্য পান্ডুয়ায় স্থানান্তরিত হলেও ১৪৫৩ সালে আবার রাজধানী ফিরে আসে গৌড়ে, এবং গৌড়ের নামকরণ হয় জান্নাতাবাদ।[৩]

বিশ্ব স্বীকৃতি

অনুমান করা হয় ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে এটি বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। উপমহাদেশীয় অঞ্চলের মধ্যে বিজয়নগর (বিজয় সেনের এর প্রতিষ্ঠিত নগর) ও গৌড় সবথেকে নগরায়িত বলে সুপরিচিত ছিল।

উল্লেখযোগ‍্য স্থাপত্য

বড় সোনা মসজিদ বা বারো দুয়ারী

গৌড়ের স্থাপত্য কীর্তিগুলির মধ্যে এটি সবথেকে বড়। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এটির নির্মাণ কার্য্য শুরু করলেও তিনি এ কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। তার পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দীন (নুসরাত শাহ) ১৫২৬ সালে এই কাজ সম্পন্ন করেন। এর উচ্চতা ২০ ফুট, দৈর্ঘ্য ১৬৮ ফুট ও প্রস্থ ৭৬ ফুট।[৩]

দাখিল দরওয়াজা

এটি গৌড় দুর্গে প্রবেশের প্রধান দ্বার। এটি ৬০ ফুট উঁচু ও ৭৩ ফুট চওড়া এই দরওয়াজাটি ছোট ছোট ইট ও পাথর দিয়ে তৈরী করেছিলেন সম্ভবতঃ সুলতান রুকনউদ্দীন (বারবক শাহ)। ভিতরের পথটি বেশ চওড়া, তাই সওয়ারী সহ হাতি অনায়াসে এই দরওয়াজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারত। এই দরজার দুপাশ থেকে তোপধ্বনি করে সুলতান ও ঊর্ধ্বতন রাজপুরুষদের সম্মান প্রদর্শন করা হত। তাই এই দরওয়াজার আর এক নাম সেলামী দরওয়াজা।[৩]

লোটন মসজিদ

কোতোয়ালি দরওয়াজা থেকে ১ কি.মি. উত্তরে রয়েছে এই লোটন মসজিদ। এখানে ইঁটের উপর রং-বেরঙ্গের মীনার কারুকার্য ছিলো, বর্তমানে যার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই, তবে খুব ভাল করে দেখলে বোঝা যায় এর সামান্য অস্তিত্ব । ছাদের গম্বুজের নিচের দিককার সৌন্দর্য অপূর্ব।[৩]

লুকোচুরি দরওয়াজা

১৬৫৫ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা গৌড় দুর্গে প্রবেশ করবার জন্য এই লুকোচুরি দরওয়াজাটি তৈরি করেন। উচ্চতা ৬৫ ফুট ও চওড়া ৪২ ফুট। দুইদিকে প্রহরীদের ঘর ও ওপরে নহবতখানা আছে।[৩]

কদম রসুল মসজিদ

লুকোচুরি ফটক বা দরোয়াজা দিয়ে গৌড় দুর্গে ঢোকার পর ডানদিকে রয়েছে কদমরসুল সৌধ। এখানে রয়েছে হজরত মুহাম্মদ এর পদচিহ্ন, যেটা সুদূর আরব থেকে পীর শাহ জালাল ইয়েমেনী এনেছিলেন পান্ডুয়ার বড় দরগায়, সেখান থেকে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এটিকে নিয়ে আসেন গৌড় দুর্গে। তার পুত্র সুলতান নসরত শাহ ১৫৩০ সালে একটি কষ্ঠি পাথরের বেদির ওপর পদচিহ্নটি স্থাপন করে তার ওপর কদম রসুল সৌধ নির্মাণ করেন।[৩]

চিকামসজিদ

এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই স্থাপত্যটি ১৪৫০ সালে তৈরি। পূর্বে এটি সম্ভবত সমাধিস্থল ছিল। তবে কথিত আছে যে সম্রাট হুসেন শাহ এটিকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করতেন। স্থাপত্যটির ভিতরের দেয়ালে অনেক হিন্দু দেব দেবীর মূর্তি রয়েছে। পরবর্তী কালে এখানে চামচিকার উপদ্রব শুরু হলে এর নাম হয় চামকান মসজিদ বা চিকা(চামচিকা থেকে) মসজিদ।

তথ্যসূত্র

  1. "লখনৌতি - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১ 
  2. "ঐতিহাসিক স্থান"। ChapaiPortal। ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ 
  3. চক্রবর্তী, রজনীকান্ত (জানুয়ারি ১৯৯৯)। গৌড়ের ইতিহাস (PDF) (1 & 2 সংস্করণ)। Bankim Chatterjee Street, Calcutta 700 073: Dev's Publishing। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
🔥 Top keywords: বিশেষ:অনুসন্ধানপ্রধান পাতাপায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রবাংলাদেশবাংলাদেশের জাতীয় বাজেটমিয়া খলিফারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরবিড়ালকাজী নজরুল ইসলামশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)লোকনাথ ব্রহ্মচারীআফছারুল আমীনবাংলা ভাষাচট্টগ্রাম-১০ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের তালিকাপদ্মা সেতুমোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীবাংলা ভাষা আন্দোলনবাংলা বাগধারার তালিকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাইউটিউবহাঁসবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাবিশ্ব পরিবেশ দিবসবিভিন্ন দেশের মুদ্রাপশ্চিমবঙ্গগান বাংলাপ্লাস্টিক দূষণরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাসবুজ টিয়াবাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতমৈমনসিংহ গীতিকাআমবন বিড়ালশেখ হাসিনাছয় দফা আন্দোলনঢাকা মেট্রোরেলম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবহিন্দুধর্মআসসালামু আলাইকুমবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহঘাসফড়িংআনন্দবাজার পত্রিকাফেসবুকবিকাশসুন্দরবনমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনমুহাম্মাদঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরজীবনানন্দ দাশবেদে জনগোষ্ঠীজিয়াউর রহমানটিয়াবাংলাদেশ আওয়ামী লীগকরমন্ডল এক্সপ্রেসমাইকেল মধুসূদন দত্তজয়নুল আবেদিনকলকাতাবিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়জুমার নামাজকৃষ্ণসৌদি আরবযোনিইসলামে বিবাহভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনবকবেগম রোকেয়াসমবায় অধিদপ্তরভারত বিভাজনপিরামিডতুরস্কআল্লাহর ৯৯টি নামবাংলাদেশ সেনাবাহিনীওয়ালাইকুমুস-সালামশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর (বাংলাদেশ)রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানকুরআনইসলামচট্টগ্রামটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাজীববৈচিত্র্যরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)স্বামী বিবেকানন্দবাংলাদেশী টাকামুঘল সাম্রাজ্যঢাকাবিশ্ব দিবস তালিকাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায় সারণীঅণুজীব